ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

ফুলছড়ি ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তার দুর্নীতিতে বনাঞ্চল উজাড়..!

durnitiমো:সাঈদী আকবর ফয়সাল,  চকরিয়াঃ
কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের ফুলছড়ি রেঞ্জের আওতাধীন সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে অবৈধ ভাবে কর্তন করা হচ্ছে মহামূল্যবান গাছ, নির্বিচারে কাটা হচ্ছে পাহাড়, বনবিভাগের জায়গা হতে বালু উত্তোলন সহ ভূমি দখল বানিজ্য যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। সবমিলিয়ে সরকারী কোন নিয়ম কানুনকে তোয়াক্কা না করে যেনতেন ভাবে পরিচালিত হচ্ছে ফুলছড়ি রেঞ্জ ও খুটাখালী বিট কার্যালয়। সরকারি কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি টাঙ্গানোর বিধান থাকলেও এসব নিয়ম-রীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক। খুটাখালী বিট কার্যালয়ে প্রতিনিয়ত মিটিং, সেমিনার, বৈঠক চলে আসলেও অফিসে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি টাঙ্গানোর ধার ধারেন না তিনি। এছাড়াও সরকারী বনজ সম্পদ ধ্বংস, কোটি টাকা আত্মসাৎ সহ বহু অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
এ ব্যপারে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কার্যালয়টি জাতীয় উদ্যানের আওতায় আমাদের নয় এবং এখানে মাঝেমধ্যে মিটিং সেমিনার হয়। কার্যালয়টির রিপেয়ারিংএর কাজ চলছে এবং কাজ শেষ হলেই ছবিগুলো টাংগানো হবে।
খুটাখালী বন বিটের সংরক্ষিত বনঞ্চল পাগলির বিলের ছড়া খাল ও পাহাড়ের পাদদেশ থেকে বালু উত্তোলন করছে একটি মহল। বন কর্মকর্তাদের মাসিক মাসোহারা দিয়ে দিনরাত পাচার হচ্ছে বনাঞ্চলের ট্রাকভর্তি এসব বালু, মাদার ট্রি গর্জন, সেগুন সহ হরেক প্রজাতির মূল্যবান গাছ। সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে পাগলির বিল ছড়া থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের সময় ৪টি শ্যালো মেশিন ও ১০০মিটার পাইপসহ বিভিন্ন সরন্জামাদি জব্দ করা হয়। কিন্তু এ অভিযানে রহস্যজনক ভাবে কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। কেননা অভিযানের আগেই বনবিভাগের কর্মকর্তার মাধ্যমে খবর পেয়ে যায় সংশ্লিষ্ট অপরাধীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বালু উত্তোলনকারী একজন প্রভাবশালী দাবি করেন, বন বিভাগের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে বালু উত্তোলন করছেন তারা। তাই এসব নিয়ে কেউ অভিযোগ করলেও তাদের কিছু যায় আসেনা। সংরক্ষিত ওসব বনাঞ্চল থেকে সংগৃহীত বালু মহাল থেকে ফুলছড়ি রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক ও সাফারী পার্কের ১৪ বছর ধরে কর্মরত বিট কর্মকর্তা মাজাহারুল ইসলাম মোটা অংকের মাসোহারা পান।
ইতিপূর্বে বর্তমান ফুলছড়ি রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে জব্দকরা করাতকল বিক্রি করে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠে। স্থানীয় শফি সহ বিভিন্ন ব্যাবসায়ীরা রাতের অন্ধকারে সংগোপনে খুটাখালী বিট কার্যালয় থেকে জব্দকরা ৮টি করাত কল ও যন্ত্রাংশ কিনে নেয়। এ ঘটনা ফাঁস হয়ে গেলে ধামাচাপা দিতে মোটা অংকের মিশনে নামেন বর্তমান ফুলছড়ি রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। এতে তিনি অনেকটা সফল হয়েছিলেন বলেও জানা যায়।
এছাড়াও ফুলছড়ি রেঞ্জের খুটাখালীতে বনবিভাগের অধিকাংশ বনভূমি জন ভূমিতে পরিনত হয়েছে। পাহাড় কেটে বসতি নির্মাণ সহ গাছ খেকোর সাথে গোপণ চুক্তির ভিত্তিতে বিক্রি করা হচ্ছে শত বছরে মাদার ট্রি গর্জন, সেগুন সহ মহা মূল্যবান গাছ। এছাড়াও মোটা টাকার বিনিময়ে বনবিভাগের জায়গায় স্থাপনা নির্মানে সহযোগিতা করে আসছেন এই কর্মকর্তা। ফলে ওসব অসাধু কর্মকর্তারা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বুনে গেলেও দখল হয়ে যাচ্ছে সরকারী বনভূমি। এতে সরকারকে হারাতে হচ্ছে বনাঞ্চলের মহামুল্যবান গাছ। এবং প্রতিনিয়ত ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। খুটাখালী সেগুন বাগিচা বাগানি পাড়া, তানজুক কাটা এলাকায় উডলট ও আগর বাগানের সর্বধিক জায়গা দখল হয়ে গেছে। গাছ কাটতে কাটতে প্রায় বিরানভূমিতে পরিনত হয়েছে খুটাখালীর এসব বনাঞ্চল। এসব আপকর্মগুলোর মুলে ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক থাকলেও তা মানতে রাজী নন তিনি। অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারীরা মাসোহারা দিতে অপারগতা জানালেই এ কর্মকর্তা শুরু করেন লোক দেখানো অভিযান। দু’একটি স্থাপনা অস্থায়ী ভাবে ভেঙ্গে দিয়ে গনমাধ্যম কর্মিদের দিয়ে রিপোর্ট করান যাতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ তাকে নিয়ে ইতিবাচক ধারণা লাভ করে। তবে তার এ সাজানো নাটকের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষকে দেখাতে মামলার বলি হতে হয় স্থানীয় খেটে খাওয়া লোকজনের। সরকারী নির্দেশ অমান্যকারী কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফুলছড়ি রেঞ্জের আওতাধীন বনাঞ্চল ধ্বংস জজ্ঞের মুল নায়ক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাকের খুটির জোর কোথায় ? এমনই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন সচেতন মহল।

পাঠকের মতামত: